একটি সুন্দর জীবনমুখি প্রবন্ধ গল্প

 একটি সুন্দর জীবনমুখি প্রবন্ধ গল্প পতীকের ছেলেবেলা লেখক তার নিজের জীবনকে উপলব্ধি করে এই প্রবন্ধটি লিখেছেন । প্রবন্ধটি অবশ্যই আপনাদের কাছে ভালো লাগবে । এই প্রবন্ধের প্রতীক লেখক নিজেই এবং ব্লগার নিজেই গল্পটি অবশ্যই পড়বেন





একদিন বিকেল বেলা সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে ।ঠিক এমন সময় একটা খাতার পৃষ্ঠা হালকা বাতাসে ঘুরতে ঘুরতে আমার পায়ের কাছে এসে থেমে গেল । বড় বড় অক্ষরে লেখা একটি শব্দ শৈশব । আমার মনে ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে উঠলো দেখি কি লেখা আছে    একটি সুন্দর জীবনমুখি প্রবন্ধ  । 

তখন তেমন বুদ্ধি হয়নি আমার, মা পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন, আর শুরু হলো আমার ভয়াবহ দিন। আমরা ছয় ভাই বোন 4 ভাই 2 বোন । দিদিরা বড় কাজেই তাদের বিয়ে হয়ে রীতিমতো সংসার হয়ে গেছে । বড় দাদা উদয় এক বছর বাদে বিয়ে করে সংসার করল । আর মেজদা বিমল ড্রাইভারি শেখার উদ্দেশ্যে ট্রাকের হেলপারি আরম্ভ করলো।

 এসময় আমার বয়স 9 -10 এর ভেতর হবে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়া শেষ হলো ।হাই স্কুলে ভর্তি হয়, এদিকে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন ,যতদিন না তাদের ছেলে মেয়ে হয়েছিল, ততদিন বেশ ভালোবাসতেন যেই ভাই বোন হয়েছে -অমনি শুরু হয়ে গেল দুর্দশার দিন । এতে আমার ভাই বোনদের দোষ দেব না কারণ সবকিছু তাঁর ইচ্ছা জিনি সবকিছুর মালিক।

 এত কষ্ট পেয়েছি যে কষ্টের দিনগুসোর কথা লেখা সময় চোখের জল কোনমতেই থামাতে পারলাম না। হাত দটো থর থর করে কাঁপতে আছে অঝরে চোখের জল অঝরে ঝরে চলেছে ,গায়ের লোমগুলো কাঁটা দিয়ে উঠেছে । 

যখন আট বছর বয়স, তখন মাঠে যেতাম গম কুড়াতে যখন চাষিরা জমি থেকে পাকা গমের শীষ গুলো কেটে নিত, তোলা ঝাঁপি করতে গিয়ে কিছু কিছু গমের শীষ এড়িয়ে থাকতো । ওই গুলি কুড়িয়ে কুড়িয়ে রাখতাম যেদিন অনেকগুলো হত লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গমের বীজ গুলো বার করতাম ।এমনি করে বাচপাট রাইশষ্য এসব কুড়িয়ে কুড়িয়ে বিক্রি করতাম আর যে টাকা গুলো পেতাম আমার বড় মায়ের হাতে জমা রাখতাম।

আর যখন প্রয়োজন হত ,খাতা পেন কেনার জন্য তখন চেয়ে নিতাম । তখন অনেকেই একসঙ্গে স্কুলে পড়তাম যখন অন্যান্য ছেলেরা আইসক্রিম, জালমুড়ি, চকলেট, কত কি খাচ্ছে আমি তখন ক্লাসে গিয়ে বই এর ভেতর মাথা গুঁজে দিয়ে পড়তেই থাকতাম। পড়াশোনায় মন্দ ছিলাম না ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস ফোর পর্যন্ত ফার্স্ট বয় ছিলাম চার থেকে বেরিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছি সেও 80 টাকা ভর্তি ফি কোন কষ্টে যোগান দিয়েছি তা উপরওয়ালা তিনি ভালো জানেন যাই হোক ক্লাস ফাইব থেকে ক্লাস 6 এ সেকেন্ড হয়েছি ।এদিকে বাড়িতে আমার সেই সৎ মা সৎ মা হলেও সে-ও তো মা কিন্তু এত দুর্দশা করেছে যে সে আর কি বলব স্কুল যাবার সময় উনুনে ভাত বসাতেন আর আর স্কুল থেকে ফেরার পর দেখতাম ভাত ফুরিয়ে গেছে ।প্রথম প্রথম খুব কান্না পেতো। ধীরে ধীরে এসব সহ্য হয়ে গেল।
 কি করতাম কান্না শোনার মত তো আর কেউ নেই। গর্ভধারিনী মা যে নেই, কে বলবে খেয়ে নে খাবি আয় খুব মনে পরতো মায়ের কথা । খিদের দাপটে যখন সহ্য করতে না পারতাম পাড়া-প্রতিবেশী চাচি খালার কাছে যেতাম । ভিখারির মত চায়তাম চাচি চারটে ভাত দাও না সারাদিন কিচ্ছু খাইনি ,এমনি করে কতদিন গেছে। খাওয়া নিয়ে আমার বড় দাদা আমার প্রতি মায়া করে বাবাকে কিছু বলতে গিয়ে দাদাকেও শুনিয়ে দিল "তোর ভাই তুই নিয়ে যা" কারো কাছে গেলাম না । শুনে ছিলাম মাদ্রাসায় ফ্রী পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়া পাওয়া যাযায়।তাই একাই মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম কিন্তু বিনা খরচে যে ডেড বডি ও পোড়ানো যায় না *

তাই আর পড়াশোনা হল না ।শুরু করলাম হেল্পরি করতে কলকাতায় গিয়ে একটি গুল ফ্যাক্টরি তে কাজ পেলাম ।প্রতিদিন 40 টাকা বেতন, সারাদিন খালি পেটে কাজ করে সন্ধ্যেবেলা টাকা নিয়ে চাল ডাল সবজি কিনে রান্না করে খেয়েছিলাম এতো সুখের তৃপ্তি সেদিন পেয়েছিলাম আনন্দে চোখের জল বাগ মানলোনা মনে হয় সমস্ত সাগরের জল চোখে লুকানো ছিল ।সমস্ত ছেলেবেলাটা এক ঝলকে সিনেমার পর্দার মতো চোখের সামনে ভাসছে পাতের ভাত পাতেই রইলো সেদিন পেট ভরে গেছে ।


এই তৃপ্তি বোঝাবো কেমনে 
আছিলাম কত সুখে ।
আসমান ছিড়ে খেয়ে নিতাম 
মিলতো যদি সেই ভুকে ।
না থাকার চেয়ে ছেঁড়া কাঁথা আছে 
শুয়ে আছি বড় সুখে 
তাই হাসি সুখে।।
Powered by Blogger.