Education to Employment Policy
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতবর্ষের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ একটা পিছিয়ে পড়া রাজ্য এ রাজ্যে অবকাঠামো এবং উন্নতির জন্য আমি মনে করি এডুকেশন একমাত্র দায়ী ।
কারণ সমাজ শিক্ষিত হলে দেশের উন্নয়ন সর্বক্ষেত্রে সম্ভাব্য এই কারণে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ শিক্ষা অর্থাৎ এডুকেশন সম্পূর্ণ ফ্রি হলে এবং এডুকেশন কমপ্লিট এর সঙ্গে সঙ্গে চাকরির জন্য জয়েনিং লেটার পাওয়া অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ সফলতা যদি সরকার দিতে পারে, সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের বেকার যুবক পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে বাইরের দেশে অথবা অন্যান্য রাজ্যে কাজের জন্য যাওয়া প্রয়োজন হবে না ।
নিজের জন্মস্থানে স্বনির্ভর হতে পারবে। এটা আমার চিন্তাভাবনা।
পশ্চিমবঙ্গের বিকাশে শিক্ষার ভূমিকাঃ একটি বাস্তববাদী দৃষ্টিকোণ
ভারতবর্ষের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গ একসময়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে দেশের অগ্রণী রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় রাজ্যটির আর্থ-সামাজিক অবস্থা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। এই পশ্চাৎপদতার মূল কারণ খুঁজতে গেলে স্পষ্টভাবে একটি বিষয়ই সামনে আসে — শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা।
১. শিক্ষা ও অবকাঠামোর সম্পর্ক
একটি দেশের বা রাজ্যের উন্নয়নের মেরুদণ্ড হলো তার শিক্ষা ব্যবস্থা। যদি জনসাধারণ শিক্ষিত হয়, তবে তাদের চিন্তাধারা, দক্ষতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পায়। ফলে তারা অবকাঠামো, প্রযুক্তি, শিল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বহু জেলায় এখনো বেসিক শিক্ষার অভাব, উচ্চশিক্ষায় সুযোগ সীমিত এবং মানসম্পন্ন টেকনিক্যাল ও প্রফেশনাল শিক্ষার অবকাঠামো দুর্বল।
২. ফ্রি এডুকেশন ও গ্যারান্টিড চাকরিঃ বাস্তবসম্মত নাকি কল্পনা?
আপনার প্রস্তাবনাটি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত — যদি সরকার উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ ফ্রি করে এবং শিক্ষা সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি চাকরির গ্যারান্টি (অন্ততপক্ষে একটি সরকারি/প্রাইভেট অফার লেটার) দিতে পারে, তাহলে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ তরুণ বেকার হবে না। তারা বাধ্য হবে না অন্য রাজ্যে বা দেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে। বরং নিজের রাজ্যেই থেকে উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।
তবে প্রশ্ন হলো, এটি কতটা বাস্তবসম্মত?
ক) সরকার যদি বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা দেয়:
এতে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের সন্তানরাও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।
ড্রপআউট হার কমবে।
স্কিলড জনবলের সংখ্যা বাড়বে।
খ) শিক্ষা শেষে সরকারি বা প্রাইভেট সেক্টরে অফার লেটার গ্যারান্টি:
এটি কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
‘Skill Mapping’ এবং ‘Edu-to-Employment’ পলিসির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্স অনুযায়ী নির্দিষ্ট জব সেক্টর নির্ধারণ করা যায়।
শিল্পতালুক, আইটি হাব, কৃষি প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ ইনকিউবেটরের প্রসার ঘটাতে হবে রাজ্যে।
৩. কর্মসংস্থানের অভাবেই তরুণরা পরিযায়ী শ্রমিক হচ্ছে
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের এক বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী বাধ্য হয়ে কেরালা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, দিল্লি বা মধ্যপ্রদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই উচ্চমাধ্যমিক বা স্নাতক পাশ শিক্ষার্থী। নিজ রাজ্যে পর্যাপ্ত চাকরি না থাকায়, তারা কম মজুরির বিনিময়ে অন্যত্র শ্রম দিচ্ছে। এর ফলে রাজ্যের মানবসম্পদ অন্য রাজ্যের উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে — পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়ছে।
৪. সমাধান কী হতে পারে?
✅ বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা: রাজ্য সরকারকে অবশ্যই ধাপে ধাপে উচ্চশিক্ষা ফ্রি করার দিকে অগ্রসর হতে হবে। প্রথমে সরকারি কলেজে, তারপর সরকারি অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।✅ ক্যারিয়ার ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার: প্রত্যেক জেলায় এমন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির জন্য প্রস্তুত করা হবে।✅ সরকারি চাকরির পরিসংখ্যান
পশিল্পভিত্তিক শিক্ষা ও স্টার্টআপ স্কিম:
ড়াশোনার সঙ্গে ব্যবসা শেখার সুযোগ থাকলে বহু তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারবে। এতে নিজের চাকরি তো হবেই না, বরং অন্যদেরও চাকরি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।✅ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট সেক্টরের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে “শিক্ষা + চাকরি” মডেল বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
৫. উপসংহার
পশ্চিমবঙ্গকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, কর্মসংস্থানমুখী এবং জীবনের জন্য প্রয়োগযোগ্য শিক্ষা। সরকার যদি চাইলে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে “ফ্রি হায়ার এডুকেশন + জব গ্যারান্টি” স্কিম বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে এটি হতে পারে ভারতের মধ্যে একটি উদাহরণযোগ্য সমাজ পরিবর্তন। আর এই পথেই পশ্চিমবঙ্গের তরুণরা আর “পরিযায়ী শ্রমিক” নয়, হয়ে উঠবে নিজভূমির গর্বিত নির্মাতা।
এই বিশ্লেষণটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং সামাজিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এখানে আমরা ধাপে ধাপে বিষয়টি বিশ্লেষণ করবো — সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা, বাৎসরিক অবসরপ্রাপ্তির হার, বেতন খরচ, রিটায়ার্ড কর্মীদের জন্য সরকারের সাশ্রয়, এবং সেই টাকায় উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান করা সম্ভব কি না।
🔹 পর্যায় ১: পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চাকরিজীবীর পরিসংখ্যান
(তথ্যগুলি সরকারি রিপোর্ট, মিডিয়া রিপোর্ট এবং অনুমানভিত্তিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী সাজানো)
মোট সরকারি চাকরিজীবী (রাজ্য সরকার ও শিক্ষা, পুলিশ, স্বাস্থ্য ইত্যাদি):
আনুমানিক ৮-১০ লাখ (Source: বিভিন্ন RTI, WB Govt Employee Database)
প্রতি বছর রিটায়ার্ড হচ্ছে:
গড়ে ধরলে আনুমানিক ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ জন।
গড় মাসিক বেতন (চাকরির শেষ বছরগুলোতে):
₹৫০,০০০ (অনেকের বেশি, অনেকের কম, আমরা গড় হিসেব নিচ্ছি)
বাৎসরিক রিটায়ার্ডজনিত বেতন সাশ্রয়:
₹৫০,০০০ × ১২ মাস × ৪৫,০০০ = ₹২৭০০ কোটি টাকা প্রতি বছর
🔹 পর্যায় ২: পেনশন খরচ বাদ দিয়ে বেঁচে থাকা পরিমাণ
ধরুন রিটায়ার্ডদের জন্য গড় পেনশন: ₹২৫,০০০
⇒ পেনশন খরচ প্রতি বছর = ₹২৫,০০০ × ১২ × ৪৫,০০০ = ₹১৩৫০ কোটি টাকা
সাশ্রয় = বেতন খরচ – পেনশন খরচ
⇒ ₹২৭০০ কোটি – ₹১৩৫০ কোটি = ₹১৩৫০ কোটি টাকা
🔹 পর্যায় ৩: উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা পরিকল্পনা
ধরুন বর্তমানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সংস্কৃত, দর্শন, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব ইত্যাদিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আছে আনুমানিক ১ লাখ।
প্রতিজনকে মাসিক ₹২০,০০০ দিলে বাৎসরিক খরচ:
₹২০,০০০ × ১২ মাস × ১,০০,০০০ জন = ₹২৪০০ কোটি টাকা
🔹 চূড়ান্ত বিশ্লেষণ ও উপসংহার
সূচক পরিমাণ
বাৎসরিক অবসর সাশ্রয় (পেনশন বাদে) ₹১৩৫০ কোটি
উচ্চশিক্ষা শিক্ষার্থীদের ২০ হাজার করে বেতন খরচ ₹২৪০০ কোটি
🔍 বিশ্লেষণ:
বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, রিটায়ার্ড কর্মীদের পেনশন বাদ দিয়ে সাশ্রিত টাকা দিয়ে পুরো ১ লাখ শিক্ষার্থীকে মাসিক ₹২০,০০০ দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ এর জন্য প্রয়োজন ₹২৪০০ কোটি, যেখানে সাশ্রয় হচ্ছে মাত্র ₹১৩৫০ কোটি।
তবে যদি আমরা:
শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০,০০০ ধরি ⇒ খরচ হবে ₹১২০০ কোটি — সম্ভব
মাসিক ভাতা কমিয়ে ₹১৫,০০০ করি — তাও সম্ভব
রিটায়ার্ডদের মধ্যে যারা পুরো পেনশন পান না, তাদের হিসেব ধরলে সাশ্রয় আরও বেড়ে যেতে পারে
✅ আমার মতামত ও পরামর্শ:
তাদের সঙ্গে যদি লক্ষীর ভান্ডার অথবা যুবশ্রী বা কন্যাশ্রী এর টাকা যুক্ত করা হয় তবে প্রতিবছর এক লক্ষ স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীকে গ্যারান্টি চাকরি দেওয়া সম্ভব হবে। যদিও আমার মূল উদ্দেশ্য লক্ষীর ভান্ডার বন্ধ করা নয় বরং ফ্রি অনুদানের চেয়ে কর্ম বিনিয়োগে রাজ্যের উন্নয়ন এবং বেকারত্ব দূরীকরণ যদি ছাত্র-ছাত্রীদের ছাত্রীর গ্যারান্টি অর্থাৎ ইনকামের গ্যারান্টি থাকে তাহলে অনুদান এর প্রয়োজন কি হবে।